বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
বসুন্ধরা-বেক্সিমকো-এস আলমসহ সাত কোম্পানির শেয়ার স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের সময় ঠিক করতে হবে’ হাত-পা বেঁধে শিক্ষর্থীকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা ‘ফাত্তাহ-১’ হাইপারসনিকসহ ইরানের অস্ত্রাগারের যেসব ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ‘বড় ভুল’ করেছে ইরান, হুমকি নেতানিয়াহুর রংপুর মহানগর আ. লীগের সাবেক সহ-সভাপতি পান্না গ্রেফতার সিটি-আর্সেনালের জয়, সেল্টিককে গোলের বন্যায় ভাসালো ডর্টমুন্ড পাল্টা জবাবে ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোতে ইসরায়েলি হামলার ঝুঁকি নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান ও আইভীসহ ৪০১ জনের নামে হত্যা মামলা মারা গেছেন আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ অটোরিকশা চালক সুফিয়ান

স্বর্ণের বাজারের অস্থিরতা থামবে কবে?

  • আপডেটের সময় : শনিবার, ২৯ জুন, ২০২৪, ১২.১৩ পিএম
  • ৬১ টাইম ভিউ

চলতি বছরের শুরু থেকেই উত্থান-পতনে টালমাটাল দেশের স্বর্ণের বাজার। গত ২৫ জুন পর্যন্ত ২৯ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। আর ২০২৩ সালজুড়ে মোট ২৯ বার দাম সমন্বয় করেছিল সংস্থটি।
চলতি বছরের গত ২৫ জুন পর্যন্ত মোট ২৯ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছে বাজুস

বাজুস বলছে, দেশের বাজারে স্বর্ণের দামের এমন টালবাহানা মূলত বিশ্ববাজারের দামের কারণেই ঘটছে। ঘন ঘন দাম পরিবর্তনে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। ব্যবসায়ীরা জানান, ঘন ঘন স্বর্ণের দাম পরিবর্তনে বিড়াম্বনায় পড়তে হচ্ছে। বেচাকেনায়ও ভাটা পড়েছে। ক্রেতারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন।

চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে ২৯ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে ১৫ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ১৪ বার। সবশেষ মঙ্গলবার (২৫ জুন) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টানা দ্বিতীয় দফা স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছে বাজুস। এবার ভরিতে ১ হাজার ৪০০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের একভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৫৫ টাকা নির্ধারণ করেছে সংগঠনটি। যা বুধবার (২৬ জুন) থেকে কার্যকর হয়েছে।

স্বর্ণের বাজারের চলতি বছরের এই উত্থান-পতন শুরু হয়েছিল দাম বৃদ্ধির প্রবণতা দিয়েই। গত ১৭ জানুয়ারি ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণে ১ হাজার ৪০০ টাকা বৃদ্ধির মাধ্যমে শুরু হয় এ বছরের দাম সমন্বয়। সে সময় ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়ায় ১ লাখ ১২ হাজার ৪৪১ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়ায় ১ লাখ ৭ হাজার ৩০৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯২ হাজার ২৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম ৭৬ হাজার ৬৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এর ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১০ হাজার ৬৯১ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়ায় ১ লাখ ৫ হাজার ৬৭৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯০ হাজার ৫৭১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম ৭৫ হাজার ৪৬৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

তারপর দেড় মাস বিরতি দিয়ে গত ৬ মার্চ ফের স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। সেদিন ভরিতে ২ হাজার ২১৭ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১২ হাজার ৯০৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়ায় ১ লাখ ৭ হাজার ৭৭৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯২ হাজার ৩৭৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম ৭৬ হাজার ৯৮২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

গত ১৯ মার্চ ফের ১ হাজার ৭৫০ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১১ হাজার ১৫৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৬ হাজার ১৪২ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯০ হাজার ৯৭৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৫ হাজার ৮১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

আর গত ২১ মার্চ আবারও ভরিতে ২ হাজার ৯১৬ টাকা বাড়ানো হয় স্বর্ণের দাম। সেসময় ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৮ হাজার ৮৮৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৩ হাজার ৩১২ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৭ হাজার ৭৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর গত এপ্রিলজুড়ে উত্থান-পতনে আরও টালমাটাল হয়ে পড়ে দেশের স্বর্ণের বাজার। এ মাসে মোট ১২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছে বাজুস। যার মধ্যে কমেছে ৮ বার, আর ৪ বার বেড়েছে। যা এক মাসে সবচেয়ে বেশি দাম সমন্বয়ের রেকর্ড।

এপ্রিলের ৬, ৮ ও ১৮ তারিখ টানা তিন দফায় বাড়ানো হয় স্বর্ণের দাম। এর মধ্যে ১৮ এপ্রিল ভরিতে ২ হাজার ৬৫ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা। যা এখন পর্যন্ত দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে সেদিন অন্যান্য স্বর্ণের দাম বাড়লেও কমানো হয়েছিল সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম। তারপর গত ২০ ‍ও ২১ এপ্রিল যথাক্রমে ৮৪০ টাকা কমানো ও ৬৩০ টাকা বাড়ানো হয় ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম। এরপর ২৩, ২৪, ২৫, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৭ দফায় কমানো হয় স্বর্ণের দাম।

মে মাসজুড়েও চলে স্বর্ণের দামের ওঠা-নামার খেলা। মে মাসে ৯ বার সমন্বয় করা হয় দাম। যার মধ্যে বেড়েছেই ৬ বার। আর কমেছে মাত্র ৩ বার। গত ২ মে ভরিতে ১ হাজার ৮৭৮ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৯ হাজার ১৬৩ টাকা নির্ধারণ করে বাজুস। এরপর ৪, ৫, ৭, ১১, ১৮ ও ১৯ মে টানা ৬ দফায় বাড়ানো হয় স্বর্ণের দাম। আর গত ২৩ ও ২৫ মে টানা দুই দফায় যথাক্রমে ১ হাজার ৮৪ টাকা ও ১ হাজার ২৮৩ টাকা কমানো হয় স্বর্ণের দাম।

তবে এপ্রিল ও মে মাসের দাম উত্থান-পতনের খেলা কিছুটা স্থিমিত হয়ে আসে চলতি জুন মাসে। এ মাসে এখন পর্যন্ত তিনবার সমন্বয় করা হয়েছে স্বর্ণের দাম। যার মধ্যে বেড়েছে দুইবার।

গত ৮ জুন ভরিতে ১ হাজার ২৯৫ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৮২ টাকা নির্ধারণ করে বাজুস। আর সবশেষ টানা দুই দফায় ২২ ক্যারেটের ভরিতে মোট দাম বাড়ানো হয়েছে ২ হাজার ৪৭৩ টাকা। এর মধ্যে সবশেষ মঙ্গলবার (২৫ জুন) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টানা দ্বিতীয় দফা স্বর্ণের দাম বাড়ায় বাজুস। এবার ভরিতে ১ হাজার ৪০০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৫৫ টাকা নির্ধারণ করেছে সংগঠনটি। নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়ছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৫৫ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১২ হাজার ৯৭৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৬ হাজার ৮৩৫ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৮০ হাজার ৬২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

আর গত ১১ জুন ভরিতে ১ হাজার ৭৩ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৫৫ টাকা নির্ধারণ করে বাজুস। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৫ হাজার ৬৯১ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৯ হাজার ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান ও বাজুস সহসভাপতি মাসুদুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামের ওঠা-নামা এবং স্থানীয় বাজারে তার প্রতিফলন-এটিই স্বর্ণের দামের এমন উত্থান-পতনের মূল কারণ।

আর অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অস্থিতিশীল বিশ্ববাজারের জন্যই এই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এরকম চলতে থাকলে স্থানীয় স্বর্ণের বাজারে বিনিয়োগে মানুষ বিমুখ হয়ে পড়বে।

এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ মাহফুজ কবির বলেন, দেশের স্বর্ণের দামের ঘন ঘন পরিবর্তনের মূল কারণ বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামের অস্থিতিশীল অবস্থা। যখন বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ে বা কমে, সেই অনুযায়ী স্থানীয় বাজারে দামের সমন্বয় করার প্রয়োজন হয়। তা না হলে, স্বর্ণ পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। কিন্তু ঘন ঘন স্বর্ণের দাম ওঠা-নামা করাও আশঙ্কার বিষয়। এতে এ বাজারে বিনিয়োগকারী কমবে।

তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের সমন্বয়ের দিকে তাকালে দেখা যায়, স্বর্ণের বাজার উর্ধ্বমুখীই বেশি। আস্তে আস্তে এ বাজার সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এইটা খুব চিন্তার বিষয় এ খাতের ভবিষ্যতের জন্য। পাশাপাশি দেশের স্বর্ণ খাত আস্তে আস্তে যখন আলোর দেখতে পাচ্ছিল এবং বিশ্ববাজারে দেশের স্বর্ণের গহনার রফতানি শুরু হয়, তখন বিশ্ববাজারের এই পরিস্থিতির জন্য দেশের এ খাত হুমকির মুখে পড়ছে।

এদিকে, গত এপ্রিল মাসে বিশ্ববাজারে রেকর্ড ছুঁয়েছে স্বর্ণের দাম। ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় গত ১২ এপ্রিল লেনদেনের এক পর্যায়ে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম উঠে যায় ২৪৩১ দশমিক ৫১ ডলারে।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024

Design & Developed BY আজকের চিত্র