কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য প্রস্তুত মৌসুমি ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা। এ জন্য আগাম লগ্নি করেছেন অনেকে। তবে আড়তদারদের অভিযোগ, ট্যানারি মালিকদের কাছে বছরের পর বছর বকেয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। যার উত্তরে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাংক ঋণ অপ্রতুল, যাতে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
ট্যানারিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ করতে প্রস্তুত মৌসুমি শ্রমিকরা।
প্রতি বছর কোরবানির ঈদ এলেই দেশের পাড়া-মহল্লা, রাজধানীসহ সব এলাকায় ব্যবসায়ীদের তোড়জোড় থাকে কাঁচা চামড়া সংগ্রহের। যদিও বাৎসরিক সংগ্রহের ৬০ শতাংশই সেরে নেন আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা। বাকী ৪০ শতাংশ সংগ্রহ করেন বছরের অন্যান্য সময়ে। এবারের কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করতে পুরোদমে প্রস্তুত ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা।
ইতোমধ্যেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন ট্যানারিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ করতে আসতে শুরু করেছেন মৌসুমি শ্রমিকরা। তারা বলেন, কোরবানি উপলক্ষে কাজের চাপ বেড়েছে। চামড়া সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
চামড়া নিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত আড়তদারসহ ট্যানারি মালিকও। আড়তদারদের দাবি, অনেক টাকা লগ্নি করার পরও বকেয়ার কারণে ব্যবসা এগিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সাভারের কাঁচা চামড়া সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আবুল বাসার বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে এখনও বকেয়া সব টাকা আদায় করা সম্ভব হয়নি। এতে ব্যবসার পরিধি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
আর বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কীন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আফতাব খান বলেন, অনেক ট্যানারি মালিক বকেয়া টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন। হয়তো অল্প কিছু ট্যানারি এখনও পরিশোধ করতে পারেনি।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, আসছে কোরবানিকে কেন্দ্র করে চামড়া খাতে প্রয়োজন ৬০০ কোটি টাকা। তবে ব্যাংক ঋণ মিলেছে মাত্র ৫০-৬০ কোটি টাকা। সংগঠনটির সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাংক ঋণ অপ্রতুল, যাতে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ব্যাংক থেকে যে লোন নেয়া হয়, সেটি পরিশোধ করতে আগে চামড়া রফতানি করতে হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এক্ষেত্রে বাধ সাধছে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সার্টিফিকেট। চামড়া খাত থেকে বছরে রফতানি আয় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা হলেও শুধু এই সার্টিফিকেট না পাওয়ার কারণে বাড়ছে জটিলতা।
অর্থনীতিবিদ ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা, পুরনো রেকর্ড ভালো হলে অবশ্যই ব্যাংক লোন দেবে। চামড়া এখানে বিষয় না। এটি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের সুসম্পর্কের ওপরও অনেকটা নির্ভর করে।
উল্লেখ্য, এ বছর কোরবানি ঈদে পশুর কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ পিস।