ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা মামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেপ্তার ঝিনাইদাহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সহকারি পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান এ আসামিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
সাইদুল করিম মিন্টুর পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী কাজী নজিব উল্যাহ হিরু, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার শাহাদাত শাওন রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু এর বিরোধীতা করেন। শুনানি শেষে আদালত তার রিমান্ডেরর আদেশ দেন।
গত ১১ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধানমন্ডি থেকে সাইদুল করিম মিন্টুকে আটক করে ডিবি পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেপ্তার দেখালো পুলিশ।
এর আগে, ৬ জুন এমপি আজীম হত্যার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামাল আহমেদ বাবুকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে বাবুর ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
এদিকে ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ জানান, কলকাতায় এমপি আজীমকে হত্যার পর তার মরদেহের ছবি ঝিনাইদহের যে সব রাজনৈতিক নেতার কাছে পাঠানো হয়েছিল, তাদের সবাইকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, গত ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করা হয়।। এ ঘটনায় জড়িত সিয়াম হোসেন ও জিহাদ হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশ। আর বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন গত ২২ মে শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা করেন। মুনতারিন ফেরদৌস ডরিন মামলায় উল্লেখ করেছেন, ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউয়ের বাসায় আমরা সপরিবারে বসবাস করি। ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা আনোয়ারুল আজীম আনার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের উদ্দেশে যাত্রা করেন। ১১ মে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলি। তার কথা কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলে তা বন্ধ পাই।
১৩ মে বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপে একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। এতে লেখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি রয়েছে। আমি অমিত সাহার কাজে নিউটাউন যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নাই। আমি পরে ফোন দেবো।’ এছাড়াও কয়েকটি বার্তা আসে। ক্ষুদে বার্তাগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।
এজহারে ডরিন আরও উল্লেখ করেন, বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজ করতে থাকি। সন্ধান না পেয়ে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস বাদী হয়ে ভারতের বারানগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপরও আমরা খোঁজাখুজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জানতে পারি, অজ্ঞাত ব্যক্তিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজসে বাবাকে অপহরণ করেছে।
মামলা দায়েরের পর শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ভূঁইয়া ও সেলেস্তা রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুই দফায় তাদের ১৩ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। পরে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন।