রাজধানীজুড়ে উড়ালসড়কের নিচে অলস পড়ে আছে প্রায় ২০৭ একর জমি। পরিকল্পনা না থাকায় অধিকাংশ জায়গাই যে যার মতো ব্যবহার করছেন। সিটি করপোরেশনের উদাসীনতায় সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সদিচ্ছা থাকলে বিশ্রামাগার, মেডিকেল সেন্টার, ওয়াকওয়েসহ নানাভাবে জনকল্যাণে ব্যবহার করা সম্ভব মূল্যবান এ জমি।
২০০৪ সালে প্রথম উড়ালপথের আওতায় আসে রাজধানী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ফ্লাইওভারের সংখ্যা। বর্তমানে শুধু ফ্লাইওভারই নয়, একের পর এক প্রকল্পে ঢেকে যাচ্ছে মাথার উপরের খোলা আকাশ। বহরে যুক্ত হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, বিআরটিসহ নানা প্রকল্প।
রাজধানীতে এক খণ্ড জমি সোনার চেয়েও দামি। চরম এই বাস্তবতা সবাই বুঝলেও ব্যতিক্রম হয়তো সিটি করপোরেশন। নয়তো জমির এতো অপব্যবহারই বা হয় কি করে?
সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা না থাকার সুযোগে উড়ালসড়কের নিচের অধিকাংশ জায়গাই এখন ব্যবহার হচ্ছে ‘যেমন খুশি তেমন সাজো স্টাইলে’। কোথাও মূল্যবান জমি ব্যবহার হচ্ছে ওয়ার্কশপ হিসেবে। কোথাও গুদামঘর। আবার কোথাও ঘোড়ার আস্তাচল। কেউ কেউ ছোটখাট দোকন বসিয়েছেন। যদিও জমির এই ব্যবহারের পেছনেও রয়েছে চাঁদাবাজির অভিযোগ।
একটু পরিকল্পনা আর সদিচ্ছা থাকলে অনাদরে পরে থাকা এসব জমি ব্যবহার করে কাজে লাগানো যেতো নগরমানুষের কল্যাণে। তৈরি করা যেতো বিশ্রামাগার, শিশুদের খেলাধুলার জায়গা, মেডিকেল সেন্টার, ওয়াকওয়েসহ অনেক কিছুই।
সম্প্রতি ফ্লাইওভারের নিচের জায়গার এমন বহুমুখী ব্যবহার নিয়ে রূপকল্প তৈরি করে বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ আর্কিটেকচার অ্যান্ড আরবানিজম। নেতৃত্ব দেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদনান জিল্লুর মোর্শেদ।
প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী নকশাবিদ সৈয়দ তাওসিফ মোনাওয়ার সময় সংবাদকে বলেন, আমাদের কোন সংস্থা বা দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান এ জায়গাগুলো নিয়ে চিন্তা করেনি। ফ্লাইওভার এলাকার বাসিন্দা, পেশাজীবীদের নিয়েই ওইসব জায়গা গণপরিষদে রূপান্তর করা সম্ভব। এজন্য বড় কোনো অঙ্কের বাজেট লাগবে না বলেও জানিয়েছেন তাওসিফ মোনাওয়ার। বলেন, শুধু দরকার সিটি করপোরেশন আর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার সদিচ্ছা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, এগুলো পড়ে থাকবে না। এটা কোন না কোনভাবে ব্যবহার উপযোগী করে যেটা ভালো হয় আমরা সেটাই করবো।
ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় জমির এমন অপব্যবহারে বছরে সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও জনস্বাস্থ্যগত ক্ষতির পরিমাণ বলা হচ্ছে অন্তত ২১ হাজার কোটি টাকা।