বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
বসুন্ধরা-বেক্সিমকো-এস আলমসহ সাত কোম্পানির শেয়ার স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের সময় ঠিক করতে হবে’ হাত-পা বেঁধে শিক্ষর্থীকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা ‘ফাত্তাহ-১’ হাইপারসনিকসহ ইরানের অস্ত্রাগারের যেসব ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ‘বড় ভুল’ করেছে ইরান, হুমকি নেতানিয়াহুর রংপুর মহানগর আ. লীগের সাবেক সহ-সভাপতি পান্না গ্রেফতার সিটি-আর্সেনালের জয়, সেল্টিককে গোলের বন্যায় ভাসালো ডর্টমুন্ড পাল্টা জবাবে ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোতে ইসরায়েলি হামলার ঝুঁকি নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান ও আইভীসহ ৪০১ জনের নামে হত্যা মামলা মারা গেছেন আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ অটোরিকশা চালক সুফিয়ান

যে কারণে জাবি শিক্ষকের পদত্যাগ নাটক?

  • আপডেটের সময় : শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ৫.১৯ পিএম
  • ২৬ টাইম ভিউ

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ‘সংহতি প্রকাশ করে’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ‘সুযোগ সন্ধানী’ এক শিক্ষকের পদত্যাগের ঘটনায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ওই শিক্ষক যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছেন, তেমন সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। অথচ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধেই অসদুপায় অবলম্বন করে শিক্ষার্থীকে সুবিধা দেয়ার অভিযোগে তদন্ত চলছে। যে তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে এমনিতেই তার চাকরি চলে যাওয়ার কথা!

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, এই শিক্ষক পদত্যাগপত্রে কারণ লিখেছেন এক, আর ফেসবুকে বর্ণনা করেছেন আরেক; এটি উদ্দেশ্যমূলক এবং দুরভিসন্ধিমূলক।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবু হাসান বলেন, ‘গত ২৫ জুলাই ই-মেইলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে একটি পত্র পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি অব্যাহতির কারণ লিখেছেন, ‘ব্যক্তিগত ও পারিবারিক’। কিন্তু তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বর্ণনা করেছেন অন্যরকম। তার বিভাগের একটি সেমিস্টার পরীক্ষা কমিটি পুনর্গঠন এবং পরীক্ষার প্রশ্নপত্র খুলেছিলেন- এমন অভিযোগের বিষয়ে বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো হয়। তার প্রেক্ষিতে সিন্ডিকেট থেকে একটি স্ট্রাকচারাল কমিটি গঠন হয়েছে। বিষয়টি যেহেতু খুবই সংবেদনশীল, সেই কমিটির দুই-তিনটি মিটিংও হয়েছে। কিন্তু তিনি যেহেতু বাইরে থাকেন, তাই কথা বলতে পারছিলাম না। ভার্চুয়ালি কথা বলার চেষ্টা চলছিল। যেহেতু তার সঙ্গে কথা বলা হয়নি, তাই কমিটি রিপোর্টও দিতে পারেনি।’

রেজিস্ট্রার আরও বলেন, ‘বিষয়টি তার ব্যক্তিগত ইস্যু। পদত্যাগপত্রে কারণ দেখিয়েছেন ব্যক্তিগত ও পারিবারিক। কিন্তু ঘোষণা করছেন আরেকটা। সাধারণত কোনও পদত্যাগপত্রে এভাবে (ফেসবুকে যা লিখেছেন) লেখা হয় না।

এর আগে ফেসবুকে নিজ আইডি থেকে পদত্যাগপত্রের ছবি প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল করিম। এসময় তিনি লিখেন, ‘আমি বিগত ১৪ বছর ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষকতা করছি। দেশের সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ সরকারের উদাসীনতা এবং শিক্ষকদের দলীয় মনোভাব আমাকে অনেক ব্যথিত করেছে। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের একটি ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকারের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীকে মূল্যবান জীবন দিতে হয়েছে। সরকার চাইলে দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে পারতো, তাহলে এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটতো না। যেসব শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে, তাদের নিয়ে তাদের পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিল। সন্তান হারানোর বেদনায় তারা আজ দিশেহারা। তাদের সঙ্গে সমগ্র জাতি আজ শোকাহত। শিক্ষকদের ভূমিকা আজ জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। রাজনৈতিক দলীয় কারণে শিক্ষক সমাজের বিবেক লোপ পেয়েছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজের মূল্যবোধ এবং নৈতিকতাবোধকে জাগ্রত করতে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি ঘোষণা করছি।’

তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর গত ২৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। জনসংযোগ দফতর জানায়, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের সহযোগিতার অভিযোগে শাস্তির আশঙ্কা থেকে চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন জাহিদুল করিম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা ছুটিতে অবস্থানকালীন এবং আনুষ্ঠানিক তদন্ত চলমান অবস্থায় ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল করিমের চাকরি থেকে অব্যাহতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল করিমের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট থেকে আনুষ্ঠানিক তদন্ত কমিটির কাজ চলমান রয়েছে। এমতাবস্থায় ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই ই-মেইল যোগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে একটি পত্র পাঠিয়েছেন।

উল্লেখ্য, তিনি ২০২১ সালের ৭ আগস্ট থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন। ইতোপূর্বে তিনি মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্যও দুই বছর ছুটি ভোগ করেছেন। পিএইচডি এবং মাস্টার্স ছুটি মিলিয়ে তিনি ইতোমধ্যে প্রায় ছয় বছর শিক্ষা ছুটি অতিবাহিত করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বলা প্রয়োজন যে, ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের বিশেষ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের এমবিএ ৪র্থ ব্যাচের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের ২য় সেমিস্টার পরীক্ষা কমিটি পুনর্গঠন এবং পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের সহযোগিতার অভিযোগে তৎকালীন বিভাগীয় সভাপতি জাহিদুল করিমের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন গ্রহণ করে ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেয়ার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের ৫(ক) (২) উপধারা মোতাবেক আনুষ্ঠানিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যার কার্যক্রম বর্তমানে চলমান থাকা অবস্থায় তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে, জাহিদুল করিম তদন্তে শাস্তির আশঙ্কা থেকেই চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি উদ্দেশ্যমূলক ও দুরভিসন্ধি থেকে দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাকে কারণ হিসেবে অব্যাহতি পত্রে উল্লেখ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দৃঢ়ভাবে জানাচ্ছে যে, তার বিরুদ্ধে গঠিত আনুষ্ঠানিক তদন্ত চলবে এবং তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটা আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিজেকে হিরো বানানোর জন্য জাহিদুল করিম এমন ঘোষণা দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছয় বছর সুবিধা নিয়ে নৈতিক স্খলনের দায় এড়াতেই তিনি এ কাজ করেছেন। তাছাড়া তিনি হয়তো যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরবেন না, সে কারণেই সুযোগ বুঝে হিরো হতে চেয়েছেন। ফেসবুকে অনেকে জেনে অথবা না জেনে তার এই পদত্যাগের প্রশংসাও করেছেন।

এদিকে মেলবোর্নে বসবাসকারী শাহ মাহবুব রাজি তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতায় দেশ-বিদেশজুড়ে অগণিত আগুনে আলুপোড়া খাওয়াদের একজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জাহিদুল করিম। এই শিক্ষক আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ ছয় বছর যাবত শিক্ষা ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান এবং পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ছাত্রদের অসদুপায় অবলম্বনের সুযোগ করে দেওয়ার তার বিরুদ্ধে ২০২১ সাল থেকে তদন্ত চলমান ছিল। যে কারণে তার চাকরিচ্যুতি ছিল সময়ের ব্যাপার। আর সেটা জেনেই এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে নিজেকে সবার কাছে হিরো বানানোর প্রয়াস হিসেবে পদত্যাগ নাটক।’

ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘সবাই সবার নিজস্ব এজেন্ডা নিয়ে ব্যস্ত। মাঝখান থেকে ঝরে গেল অনেকগুলো প্রাণ।’

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024

Design & Developed BY আজকের চিত্র