সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে উচ্চ আদালতের রায়ে আন্দোলনকারীদের হতাশ হতে হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনে ৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন সরকার প্রধান।
ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অত্যন্ত বেদনা ও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আজ এসেছি। আর্থ সামজিক উন্নয়নে গত ১৫ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এখনও অনেক দূর যেতে হবে। যখন মানুষ শান্তিতে আছে তখন যখন এরকম ঘটনা হয় তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৮ তে শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন করে তখন সরকার কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে। পরে এটি নিয়ে কয়েকজন হাইকোর্টে গেলে তা বাতিল করা হয়। সরকার পরিপত্র বহাল রাখতে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে। আদালত শুনানির দিনও ধার্য করেছে। হাইকোর্টের রায়ের পর ছাত্ররা কোটা সংস্কারের দাবিতে আবার আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের শুরু থেকেই সরকার যথেষ্ট ধৈর্য ও সহনশীল আচরণ করেছে। পুলিশও তাদের সহযোগীতা করেছে। নিরাপত্তা দিয়েছে। আন্দোলনকারীরা যখন মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা জানায়, তখন তাদের সুযোগ করে দেওয়া হয়। নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু কিছু মহল ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটানোর সুযোগ নেওয়ায় যা হয়েছে তা খুবই বেদনাদায়ক, অত্যন্ত দুঃখজনক। অহেতুক কয়েকটি জীবন ঝরে গেলো। আপন জন হারানোর বেদনা আমার চেয়ে ভালো আর কে জানে। যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তাদের পরিবারকে সহানুভুতি জানাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘চট্টগ্রামে ছাত্রদের অনেককে ছাদ থেকে ফেলে দেয় সন্ত্রাসীরা। এতে একজন মারা যান। অনেকেরই হাত পা ভেঙে গেছে। এছাড়াও অনেকে আহত হয়েছেন। সাধারণ পথচারি–দোকানিকে আক্রমণ করা হয়েছে। মেয়েদের হলে ছাত্রীদের আক্রমণ করা হয়েছে। আবাসিক হলের প্রভোস্টদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের কোনো সম্পর্ক নেই। যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের খুজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।। যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে।’
কোটা আন্দোলনের প্রাণহানির ঘটনায় জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান সরকার প্রধান। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, ন্যায় বিচারের বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে। কাদের উস্কানিতে এ সংঘর্ষ শুরু হলো, কারা কোন উদ্দেশ্যে অরাজক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিল তা তদন্ত করে বের করা হবে।’
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সন্ত্রাসীরা যাতে শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে এ জন্য পিতা–মাতা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের অনুরোধ তারা যেন তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে সজাগ থাকেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে। আপিল আদালতে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। আদালত শিক্ষার্থীদের কোনো বক্তব্য থাকলে তা শোনার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সুযোগ রয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই আইন প্রক্রিয়া সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় আন্দোলনে নেমে দুষ্কৃতকারীদের সংঘাতের সুযোগ করে দেবেন না। সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য আমি সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। আমার বিশ্বাস আমাদের ছাত্র সমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায় বিচারই পাবে, তাদের হতাশ হতে হবে না।’