একই দেশের দুই চিত্র দেখা গেল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিলিগুড়িতে। সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে পাড়ি জমান শেখ হাসিনা। এ খবর প্রকাশ্যে আসার পরই দেশ ছাড়ার হিড়িক পড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
এ অবস্থায় বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা মোহম্মদ রুবেল ইসলাম। তার বাড়ি বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলায়। অন্যদিকে ভারত থেকে খোশ আমেজে বাংলাদেশে ফিরেছেন ইশাক জমান পাটোয়ারী নামের এক বিএনপি সমর্থক। ইশাক জামানের বাড়ি পঞ্চগড় জেলায়।
ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছ্, শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাংলাদেশ ছাড়ার হিড়িক পড়েছে। দলটির বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করা হচ্ছে। এ অবস্থায় জীবন রক্ষায় নিজ দেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমাচ্ছেন অনেকে।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকালে ভারতের উদ্দেশে রওয়ান হোন দিনাজপুরের যুবক রুবেল ইসলাম। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এখন দেশে থাকা দুর্বিষহ হয়ে গেছে। দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের যেখানে পাওয়া হচ্ছে, সেখানেই মারধর করা হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় আমার জীবন বাঁচানোর জন্য পরিবার রেখে ভারতে এসেছি।
আওয়ামী লীগ সমর্থক এ যুবকের ভাষ্য―দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করেছিলেন শিক্ষার্থী ও যুবকরা। যা পরবর্তীতে ক্ষমতা দখলের আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়েছে। বিভিন্ন শপিং মল, সরকারি অফিস, কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে। আর যারা এসব হামলা করেছে, তারা দেশের ভালো চান না।
স্ত্রী ও তিন সন্তান দেশে রেখেই ভারতে গিয়েছেন রুবেল ইসলাম। ভারতে প্রবেশের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশ ছাড়ার সময় রাস্তায় কোথাও কোথাও আগুন দেখেছি। দোকানপাট খোলা থাকলেও তাতে কোনো মানুষ নেই। অধিকাংশ দোকানই লুটপাট হয়েছে। তাতে কোনো জিনিসপত্র নেই।
পরিবার সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, অনুমতি পেলে স্ত্রী ও সন্তানদেরও নিয়ে আসতাম। এখন খুবই চিন্তায় আছি। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর সেখানকার মানুষ নাকি স্বাধীনতা পেয়েছে। মূলত যারা লুটপাট করছে, তাদের স্বাধীনতা হয়েছে। আর যারা দেশ চালানোর কথা ভাবছে, তারা দেশপ্রেমী না। গণভবন ও সংসদ ভবন লুট হয়েছে। কীভাবে দেশ চালাবে তারা। আর শেখ হাসিনা, তিনি যদি ফেরত না আসেন তাহলে অবশ্যই আমরা নেতৃত্ব হারাব। তার দেশ ছাড়ায় হতাশ আমরা।
এদিকে সোমবার শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরই ভারতের ফুলবাড়ির সীমান্তে ভিড় অনেকটাই থমকে গেছে। দু’দিন আগেও দুই দেশের মানুষের যাতায়াতের যে সংখ্যা ছিল, সেই সংখ্যা এখন খুবই কম। অনেকেই ভারতে পড়ালেখা ও চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন। এমনই একজন পঞ্চগড় জেলার ইশাক জামান। তিনি মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন। তিনি পড়ালেখার জন্য ভারতের সিকিমে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
ইশাক জামান জানান, তিনি বিএনপির সমর্থক। এ জন্য আগে দেশে ফিরতে চেয়েও পারেননি। তবে এবার আনন্দ-উল্লাসেই বাড়ি ফিরছেন। এ যুবক বলেন, আওয়ামী লীগের তাণ্ডবে টানা ১৭ দিন আমার বাবাকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকতে হয়েছে। বাড়িতে মা একা থেকেছেন। আমারও বাড়ি যাওয়া অসম্ভব ছিল। আমরা বিরোধী দলের সমর্থক বলেই এত অত্যাচার করা হয়েছে। এদিকে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। এ জন্য আমি আজ খুশির আমেজে দেশে ফিরছি। দেশের পরিস্থিতি এখন ভালো আছে।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা কর্মসূচি ঘিরে রোববার ঢাকাসহ সারাদেশে সরকার সমর্থিত নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে শতাধিক নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৩ জন ছাড়াও কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জে পৃথক হামলায় হাইওয়ে থানার এক পুলিশসহ মোট ১৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাইয়ের প্রথম থেকে আন্দোলন করে আসছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় গত ১৫ জুলাই রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বন্ধে গুলি চালায় পুলিশ।
শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী লীগ এবং দলটির সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের হামলায় কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী ও মানুষের মৃত্যু হয়। এ অবস্থায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ ও আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। পরে দেশের দায়িত্ব বুঝে নেয় সেনাবাহিনী।