ঘাটতির দোহাই দিয়ে এক মাসে শুধু আলু-পেঁয়াজেই অতিরিক্ত দেড় হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে বলে জানা গেছে। এমন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় ভোক্তারা! কৃষকের পণ্য মজুদদারদের হাতে চলে যাওয়ায় এই নৈরাজ্য চলছে জানিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, জড়িতদের বিষয়ে সব জেনেও মুক্তবাজার অর্থনীতির দোহাই দিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না সরকারি কর্তৃপক্ষ।
পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, একটা জায়গায় যেতে বাধ্য সবাই- খেটে খাওয়া থেকে উচ্চ পর্যায়ের মানুষ। নাম তার নিত্যপণ্যের বাজার। যৌক্তিকতাকে ছাপিয়ে যেখানে হরহামেশা বাড়ে দাম, কদাচিৎ কমে কিছুটা। কিন্তু এর মধ্যেই নানা অজুহাত দেখিয়ে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয় পণ্যের দাম। কৌশলী পন্থায় প্রতিটি পণ্যের বিপরীতে কয়েকশ কোটি টাকা ভোক্তার পকেট থেকে তুলে নেয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, সরবরাহ সংকট নেই বাজারে। কিন্তু দফায় দফায় বাড়ছে দাম। আলু প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা ও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। কিন্তু মৌসুমে কৃষক পর্যায়ে যার উৎপাদন ব্যয় হয়েছে আলুতে সর্বোচ্চ ১৬ টাকা ও পেঁয়াজে ৩৪ টাকা, যা এক মাস আগেও খুচরায় এ দুটি পণ্য বিক্রি হয়েছে ৫০ ও ৮০ টাকায়। এই দুটি পণ্যে বাড়তি দামে এক মাসেই বাজার থেকে তুলে নেয়া হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।
সাপ্লাই চেইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পণ্যের মজুদদারি ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাওয়ায় সিন্ডিকেট হয়েছে শক্তিশালী। নিত্যপণ্য নিয়ে কারসাজির তথ্য জানে সরকারের বিভিন্ন দফতর। কিন্তু মুক্তবাজার অর্থনীতির দোহাই দিয়ে নমনীয় হয়ে পড়েছে দায়বদ্ধরা। বাজার কারসাজি নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট আইন না থাকায় সরকারের কোনো উদ্যোগ বা সিদ্ধান্তের বাস্তবিক কোনো সুফল মিলছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস সময় সংবাদকে বলেন, ‘আগে একজন চাষির ৩০০ মণ আলু হলে তিনি হয়ত ১০০ মণ বিক্রি করতেন এবং ২০০ মণ নিজেই কোল্ডস্টোরেজে রাখতেন। এখন সেরকম পাওয়া যায় না। এখন সব আলুই মধ্যস্বত্বভোগীরা চাষির কাছ থেকে কিনে নিয়ে যান। আমরা যারা মুক্তবাজার অর্থনীতি বিশ্বাস করি, ব্যবসা করি- সরকার তো তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করবে না। দাম, উৎপাদন খরচ এবং ধাপে ধাপে কোন জায়াগায় কোন মূল্য হলে যৌক্তিক মূল্যটা হবে, সেটা কিন্তু আমরা চুলচেরা হিসাব করে দেই।’
তাই এমন প্রেক্ষাপটে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য দেয়া ও কৃষিপণ্যের দাম নিয়ে অরাজকতা বন্ধে ভারতের ‘মান্ডি কনসেপ্ট’ অনুসরণের পরামর্শ বিশেষজ্ঞের।
এ বিষয়ে সাপ্লাই চেইন বিশেষজ্ঞ মো. মুজিবুল হক বলেন, ‘ন্যূনতম একটা প্রাইস মার্কআপ করা আছে। সেই প্রাইস মার্কআপটা নিচে চলে গেলে মান্ডিতে কৃষক ওই পণ্যগুলো রেখে দিতে পারে। কৃষক ওই মান্ডি থেকে বিক্রি করতে পারেন, টাকা নিতে পারেন। সরকার তখন ওইটাকে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে স্টক করে পরবর্তীকালে প্রফিটে ওই ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিক্রি করে। এতে করে যেটা হয়, তাতে বাজারটা স্থিতিশীল থাকে সব সময়। তাই আমরাও এখানে সুনির্দিষ্টভাবে তাদের এই মান্ডি কনসেপ্ট মডেলটা অনুসরণ করতে পারি।’